Skip to main content
প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। রাতের খাবারটা খেয়ে আসা উচিত ছিল। সাথে মানিব্যাগটাও আনিনি। ঘটনার সূত্রপাত  সন্ধ্যায়। ড্রইংরুমে  বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি পূরোবাসা জুড়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে। ভাবলাম আম্মু হয়তো কোন কারনে আব্বুর উপর রেগে গেছেন। আর এটা তো নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু পরক্ষণেই দেখলাম ছোট বোন প্রায় উড়তে উড়তে আমার রুম থেকে বের হয়ে আসছে। কোনমতে আমার সামনে এসে বলল ভাইয়া!! ভাইয়া তোর মোবাইল!! আমার ভিতরটা ধক করে উঠল। গত সপ্তাহে মাত্র মোবাইল কিনেছি একবছরের জমানো টাকা দিয়ে। আমি বললাম কি হয়েছে আমার মোবাইল??? ভেঙে ফেলেছিস???ছোটবোন কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার আগেই দেখলাম আম্মু রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।

-রাফিদ, তোকে যা যা জিজ্ঞেস করবো সত্য বলবি। নীলা কে??

আমি অনুভব করলাম,বুকের বাঁ পাশটা কেমন যেন চিনচিন করছে।

-বল,নীলা কে??

_কেন?? কী হয়েছে নীলার??

-কিছুই হয়নি। একটু আগে তোর মোবাইলে কল এসেছিল। আমি রিসিভ করে বললাম, “আমি রাফিদের আম্মু”।ওপাশ থেকে বলল “আন্টি, আমার নাম নীলা, আমি রাফিদের গার্লফ্রেন্ড ।“

আমি বুঝতে পারছি, আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে।

-রাফিদ,দুইটা অপশন। হয়তো এই বাসায় আমি থাকবো, নয়তো তুই। আমি বললাম “আম্মু বিষয়টা এরকম না “।

-রাফিদ, পাঁচ  মিনিট টাইম।

আম্মুর সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। আম্মু এক কথার মানুষ। মাথা নিচু করে বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। আম্মু তো কমপক্ষে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন বিষয়টা নিয়ে। জগতের সব আম্মুই মনে হয় এরকম হয়।বটতলায় এসে বসলাম। কিছুক্ষণ গেম খেললাম, কিছুক্ষণ গান গাইলাম কিছুক্ষণ নীলার চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে গালাগালি করলাম। তারপরও সময় কাটছেনা। মাত্র বারোটা বাজে।

-এই যে মিঃ রাফিদ!

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম এবং দেখলাম, যেই ইবলীসটার কারণে আজ আমার এই দশা, সেই নীলা দাঁড়িয়ে আছে। শান্তভাবে পাশে এসে বসল নীলা।যেন কিছুই হয়নি।

_কেন এমন করলি?

-তোকে দেখতে খুব মন চাচ্ছিল তাই।

_এটাতো আমাকে বললেও পারতি।এই কাহিনীটার কি দরকার ছিল?

-আসলে তোর সাথে একটা রাত থাকতে ইচ্ছে করছিল।তোকে নরমালি বললে তো তুই দেখা করেই চলে যেতি।তাই এই বুদ্ধি। বলেই নীলা খিলখিল করে হাসা শুরু করল।

_একদম হাসবিনা!ঘুষি দিয়ে তোর সবগুলা দাঁত খুলে ফেলব!!

-শোন তুই যদি আমাকে মারিস, তাহলে আমি চিৎকার দিয়ে লোকজন জড়ো করে বলব, “এই ছেলেটা রাত দুপুরে আমার শরীরে হাত দিয়েছে “।

প্রথম ডলা খাবি পাবলিকের হাতে, দ্বিতীয়ডলা খাবি জেলহাজতে।  এখন তো একরাত না খেয়ে আছিস, তখনকত রাত না খেয়ে থাকবি, সেটা উপরওয়ালাই ভালো জানেন। বলেই নীলা  হেসে উঠলো।

-রাফিদ,একটা কাজ করলে কেমন হয়? চল আমরা বিয়ে করে ফেলি!

আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, আমার কান গরম হয়ে যাচ্ছে।

-আচ্ছা স্বেচ্ছায় বিয়ে না করলে আর কি করা! কাল সকালে বাসায় যেয়ে বলব,” কালকে সারারাত রাফিদের সাথে হোটেলে ছিলাম “।আর কিছু বলা লাগবে না। বাসার লোকেরাই ব্যবস্থা করে ফেলবে।

আমি হতাশ হয়ে বসে বসে আছি। এই মেয়ের যন্ত্রণায় আমার লাইফ পুড়ে ছারখার। জীবনে এমন কি পাপ করেছিলাম যে, এই মেয়ের পাল্লায় পরতে হল।

-রাফিদ,চল লাচ্ছি খাই।

_আমারে বেচে দে,তারপর যেয়ে লাচ্ছি খা।আমার কাছে একটা পয়সাও নাই।

-আমার কাছেও নাই!!

_তাইলে কি দোকানদার তোর চেহারা দেখে লাচ্ছি  দিেব?

-রাফিদ, আমি তোর মত বলদ না। আয় আমার সাথে। বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে একটা জুসকর্নারে নিয়ে গেল। দেখলাম দুনিয়াতে পাগল আমরা একা না।  প্রায় ৪-৫জন বসে বিভিন্ন ধরনের জুস খাচ্ছে।রাত তখন দুইটা। নীলা কাউন্টারে যেয়ে বলল,”ভাইয়া!আজ সকালে আমরা কোর্টম্যারেজ করেছি।দুজনের কারো ফ্যামেলী বিষয়টা মেনে নেয়নি।খালি হাতে আমাদের বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।আপনি কি আমাদের দুইটা লাচ্ছি বিনামূল্যে দিতে পারবেন??

কাউন্টারের ছেলেটা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।এরপর বলল,”রফিক,আপুদেরকে ৪টা স্পেশাল লাচ্ছি দাও”।

-ধন্যবাদ ভাইয়া।

লাচ্ছি হাতে নিয়ে বের হয়ে আসলাম। নীলা বিজয়ীর বেশে বলল,” দেখলি, এভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে দুনিয়ায় চলতে হয় “।

লাচ্ছিটা খেতে ভালই লাগছে।নীলা বলল”চল,এবার রাতে থাকার জন্য একটা হোটেল খুঁজে বের করি।আমি কিছু বললামনা।এরমধ্যে নীলার ফোনটা বেজে উঠল। নীলা বলল,

-আন্টি ফোন দিয়েছে।

_কোন আন্টি?

-আমার শ্বাশুড়ী আন্টি!!!!

আমি ভাবলাম,ও হয়তো মজা করছে।নীলা ফোন রিসিভ করল।

-হ্যালো আন্টি, হ্যা,ও আমার সাথই আছে।কথা বলবেন???ওতো রাগ করে আছে।এখন মনে হয় কথা বলবেনা।আচ্ছা আন্টি, রাগ কমলে আমি ফোন দিব।

_সত্যি আম্মু ফোন দিয়েছে??

-তো িক মিথ্যা!!

_আম্মু তোর নাম্বার কোথায় পেল??

-আজীব তো!শ্বাশুড়ীর কাছে তার হবু বউয়ের নাম্বার থাকবেনা???

কি বলল আম্মু?

বলেছে,”হোটেলে না থেকে তোর বাসায় যেয়ে থাকতে।

_তুই সবকিছু নিয়ে ফাজলামো করিস।

-অনেক রাত হয়েছে।চল,বাসায় যাই।

_তোর মন চাইলে তুই যা।

-দূরে পুলিশভ্যান টা দেখেছিস। আমি চিৎকার দিলে আসতে বেশিক্ষণ লাগবে না। এখন তো সিদ্ধান্ত। বাসায় যাবি না জেলে। আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।এই জ্বালা কতদিন সইতে হবে কে জানে!!!

নীলাকে নিয়ে বাসার সামনে গেলাম।দেখি গেটে মা দাড়িয়ে আছেন। তিনি একা নন। তার সাথে নীলার মাও আছেন।আমার আম্মু দাড়িয়ে থাকবেন,এটা স্বাভাবিক। কিন্তু নীলার আম্মু এতরাতে এখানে কেন?তিনি থাকবেন তার বাড়ির গেটে।হঠাৎ ককরে আলোর ঝলকানিতে আমার চোখ ধঁাধিয়ে গেল।কয়কবার চোখ পিটপিট করে ভালো করে তাকালাম।একি!!এত রাতে আমাদের বাড়িতে আলোকসজ্জা কেন?

ওমা!গেটে দেখি মামা,খালাসহ সব আত্মীয় স্বজনরা দাড়িয়ে আছে। আমি কেবলাকান্তের মত দাড়িয়ে রইলাম।নীলা মিটিমিটি হাসছে।

_আম্মু, এগুলা কি হচ্ছে?

আম্মু আমার আর নীলার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন।

ঐ রাতেই আমার আর নীলার বিয়ে হয়ে গেল।পরে আম্মুর কাছে শুনেছিলাম, এ সবই ছিল পরিকল্পিত।

#আজ আমাদের দশম বিবাহ বার্ষিকী। আমি আর নীলা সেই বটতলায় বসে আছি।ঘড়ির কাটা ১টার ঘর পেরিয়ে গেছে।আমি বললাম,

_নীলা,অনেক রাত হয়ে গেছে।চলো বাসায় যাই।

-আরো ঘন্টাখানিক বসবো।

_নীলা,অনেক রাত হয়ে গেছে। আম্মু রাগ করবে।

-রাস্তায় মানুষজন ভালোই আছে।বাকিটা তোমার ইচ্ছা। বলেই নীলা ফিক করে হেসে উঠল।

নীলা আগের মতই রয়ে গেছে। বিয়ের পর দশ বছরেও তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি।অবশ্য পরিবর্তন আসুক, আমিও তা চাইনা।কেন চাইনা,তার কোন উত্তর আমার জানা নেই।

থাকুকনা কিছু প্রশ্ন উত্তরবিহীন জীবনের খাতায়!!!!!!!

গল্পঃনীলা সমাচার

~যাকারিয়া হাসান

Comments

Popular posts from this blog

প্রত্যাবর্তন

প্রত্যাবর্তন আজ আমার ছাত্রী রিমির বিয়ে। বাসায় গিয়ে পড়াতাম একটানা ৫ বছর। এখন অর্নাস সেকেন্ড ইয়ার। ছেলে বিসিএস ক্যাডার। হাতছাড়া করেনি পরিবার। রিমি ছোট্র একটা মেসেজ দিয়েছে আমাকে,,,,এই বিয়েতে আমার মত নেই। আমি আর কি বলবো।  ভালো কোন পাঙ্জাবিও নেই আমার। মেসমেট জহিরের পাঙ্জাবিটা নিয়ে গায়ে চাপালাম। খুব যে মানিয়েছে তা বলা যাবেনা। চশমা খুজছি। চোখে দিলাম।  যখন ওদের বাড়িতে গেলাম,দেখলাম ৪ তলা বাড়িটা নিয়ন বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে কতশত মেহমান। ধনীদের সাথে নিজেকে মানানোটা বড্ড কঠিন। রাত প্রায় ১০ টা বাজতে চলল।  ক্ষুধা লেগেছে একটু। এক টেবিলের কোনে বসলাম।  হঠাৎ রিমি এসে আমার হাত ধরেছে,,,,কুৃত্তার বাচ্চা আমারে অন্য ছেলের হাতে তুলে দিয়ে তুই গিলছিস।  ওঠ আজকে তোরে খুন করবো।  এই রিমিকে আমি কখনও দেখিনি,,,শুনেছি বড্ড রাগী।  আমিতো অবাক,,,রিমির সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক নাই।  আমি বললাম,,,কি বলছো এসব তুমি। আমি কি করলাম। থামো রিমি, বাড়ি ভর্তি মেহমান। এই কুত্তা তুই জানিস না আমি তোরে পছন্দ করি।  আমি তোকে ছাড়া বাচবোনা। তুই আমাকে কখনও বুঝেছিস। এই ছুড়ি দিয়ে আজ তোরে আমি খুন করবো। ততক্ষনে বাড়ির সব মেহমান চলে এসেছে। র...

ইন্ডিকেটর লাইটের ব্যবহার

ইন্ডিকেটর লাইটের ব্যবহারঃ  আমরা যে কোন যানবাহন ই রাইড করি না কেন আশেপাশের যানবাহনের ড্রাইভারের সাথে আমাদের কমুনিকেট করার প্রধান মাধ্যম ইন্ডিকেটর। আজকেই বাইকবিডিতে এই ইন্ডিকেটরের সিগনাল না বোঝার কারনে একজন R15 ইউজারের দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার পোস্ট দেখলাম, আল্লাহ সহায় নইলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। আমাদের ধারণা শুধু পিকাপ মুচড়াইতে পারলে আর বাউলি মারতে পারলে সে প্রো রাইডার (আসলে মাথা মোটা রাইডার)। নিরাপদ রাইডিং এর জন্য বাইক চালানোর সাথে সাথে রোড সিগলাল, বিভিন্ন ধরনের সংকেত, গতি নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরী।  আজকে শুধু ওভারটেকিং এর সময় ইন্ডিকেটর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবোঃ মেনে চললে আপনি ই লাভবান হবেন- ১. আপনার সামনে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার যাই থাকুক যদি সে ডানে ইন্ডিকেটর দেয়, আপনি কোনভাবেই তাকে ওভারটেক করার চেষ্টা করবেন না, এই ইন্ডিকেটরের অর্থ বিপরীত দিকে অবস্টেকল আছে অথবা ঐ গাড়ি তার সামনের গাড়িকে ওভারটেক করতে যাচ্ছে, সেই মুহূর্তে আপনি ওভারটেক কর‍তে যাবেন না। ২. আপনি ওভারটেক করার জন্য সামনের গাড়িকে হর্ন অথবা পাস লাইট দিলেন, তখন সে যদি বামে ইন্ডিকেটর দেয় তখন আপনি...

রমাদান_রুটিন

রমাদান_রুটিন পুরো রমজান হয়তো ঘরে বসেই কাটাতে হবে । অন্যভাবে দেখলে এরকম রমজান জীবনে আর নাও পেতে পারি । হ্যা, আমরা চাইলেই খুব খারাপ এ সময়টাকে বাকি জীবন আর মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য সেরা সুযোগ হিসেবে নিতে পারি ।  সহীহ হাদিসে নবী সা: বলেছেন, আল্লাহর অভিশাপ তার উপর, রমজান চলে গেল অথচ যে ক্ষমা নিতে পারলো না ।  আসুন একটা রুটিন করে ফেলি । পার্থিব জীবনের সফলতার জন্য তো কম রুটিন করি নাই, আসলে টার্গেট ছাড়া কিছুই অর্জন হয় না । আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত দিচ্ছি, পছন্দ না হলে আপনি আপনার মত শোধরে নিবেন । তবুও এমন যেন না হয় কোন টার্গেট ছাড়া ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা রমজান চলে গেল । ব্যক্তিগত : ১. সুরা ফীল থেকে নাস । আমরা সবাই কম বেশী জানি । কিন্তু শুদ্ধ উচ্চারণ আর বাংলা অর্থ জানি না, এমন সংখ্যাটাই আমাদের মাঝে বেশী। এ কারণেই আমরা নামাজের মজাটা পাই না । মন দৌড় দেয় এদিক সেদিক ।  ২. AlQuran(Tafsir & by Word) । খুব ভাল একটা অ্যাপস । আজই নামিয়ে নিন । এই রমজানে প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট হলেও অর্থ সহ কোরআন পড়বো । প্রতিদিন দশটা করে হাদিস পড়বো । অ্যাপস নামিয়ে বুখারী দিয়ে শুরু করি । Bangla Hadith খুব ভাল একটা অ্যাপ...